মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ নাজিরপুরে জমি দখল ও কালিমন্দির ভাঙচুরের অভিযোগ করে ফেসবুকে মিথ্যা গুজবের প্রচারণায় বিপাকে পড়েছে উপজেলা ভূমি অফিস।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে দখলকৃত খাল উচ্ছেদে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ভূমি অফিস। উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীঘিরজান বাজারের পশ্চিম পাশের খালের দখল উচ্ছেদে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, গত সোমবার (৬ জুলাই) সকালে উপজেলার দীঘিরজান বাজার সংলগ্ন একটি খাল দখলের উচ্ছেদ করতে গেলে দখলের সঙ্গে জড়িতরা স্থানীয় হিন্দুদের জমি দখল ও কালিমন্দির ভাঙচুরের অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করে। আর এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহমি মো. সায়েফ বলেন, নাজিরপুর সদর ও মাটিভাঙ্গা ২ ইউনিয়নের বড় বুইচাকাঠী ও ২৫ বানিয়ারী মৌজার সংলগ্ন ওই জায়গায় ১৫ ফুট প্রশস্ত একটি খাল রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ওই খাল দখলের খবর আসে। পরে ভূমি অফিসের লোকজন পাঠিয়ে সেখানে ওই দখল উচ্ছেদের অভিযান চালানো হয়। মন্দিরের জমি বেদখল বা সেখানে বেড়া ভাঙার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে জমি দখল ও কালিমন্দির ভাঙচুরের অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করার প্রতিবাদে বুধবার (৮ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র বসু।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ‘আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পেয়েছি ২০০ বছরের পুরনো শিব মন্দির ভাঙেনি, তা যেমন ছিল তেমনিই আছে। ওখানের জমিটি মজুমদারদের (হিন্দু) বলে তারা দাবি করছেন।
ওই জমি সংলগ্ন ও ওই জমির মালিক দাবি করা উপজেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি মনিন্দ্র নাথ মজুমদারের ছেলে মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপ্তেন মজুমদার বাপ্পী জানান, ওই জমি দখল করতে ওয়ার্ড আ. লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি লোকমান হাকিম হিরু, কামরুল শেখ কাবুল ও হেদায়েত শেখ চেষ্টা করছে। আমাদের পৈত্রিক ওই জায়গার ১১ শতাংশ জমি নিজেদের দখলে রাখতে তাতে বেড়া দিয়েছি।
এ সময় সেখানে থাকা ওই জমির মালিকানা দাবি করা সুশিল মজুমদার জানান, ওই জমি আমাদের। তবে সরকারের দাবি করা খাল বা জায়গা আমাদের বাড়ির ভেতরে পড়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বিকালে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমল মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র বসু, যুগ্ম সাধারণ সাম্পাদক দোলা গুহ ও চন্দ্র শেখর হালদার, নাজিপুর উপজেলা সভাপতি মাস্টার সুখরঞ্জন বেপারী, সাধারণ সম্পাদক তুহিন হালদার তিমির প্রমুখ।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা ও দেখা গেছে, সেখানে থাকা শিব মন্দির ও তার জন্য দেয়া পূর্ব-পশ্চিমের বেড়া অক্ষত রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণের যে অংশের বেড়া ভাঙা হয়েছে সেখানে রেকর্ডিও খাল ছিল। স্থানীয়রা সেই খাল দখল করতে বেড়া দেন। ভূমি অফিস সেই বেড়া ভেঙে ফেলেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি (পিরোজপুর-১) মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম বলেন, ওই জমি স্থানীয় হিন্দুদের হলে তা তারাই ভোগ করবেন। হিন্দুদের ওপর কোনো অত্যাচার বা মন্দিরে আঘাত করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে তদন্তকরা নাজিপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মো. জাকারিয়া হোসেন জানান, ভূমি অফিস তাদের জমি উদ্ধারে কাজ করছেন। আর এ জন্য সেখানে থাকা এক হিন্দু ও মুসলমানের দোকানও উচ্ছেদ করা হয়েছে। শিবমন্দির ভাঙা বা মন্দিরের কোনো বেড়া ভাঙা হয়নি।
Leave a Reply